কিছু অজানা তথ্য লতা মঙ্গেশকর সম্পর্কে
গত ৬/০২/২০২২ তারিখে কিংবদন্তী সুরসম্রাজ্ঞী ও ভারতরত্ন লতা মঙ্গেশকর আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছেন। ‘নাইটিঙ্গেল অফ ইণ্ডিয়া’ নামে পরিচিত লতাজী প্রায় ৭৭ বছর ধরে তাঁর সুরেলা কন্ঠে আমাদের ত্রিশ হাজারেরও বেশী গান শুনিয়ে গিয়েছেন। ভারতীয় সঙ্গীত জগতের তর্কাতীতভাবেই শ্রেষ্ঠ নেপথ্যশিল্পী লতা মঙ্গেশকার তাঁর সুরসৃষ্টির মাধ্যমেই আমাদের মধ্যে বেঁচে থাকবেন। তাঁর একক সঙ্গীত এবং রফি, কিশোর বা মুকেশের মতো কিংবদন্তী শিল্পীদের সাথে দ্বৈতসঙ্গীত চিরকালীন হয়ে থাকবে।
আজ আপনাদের শোনাবো ‘নাইটিঙ্গেল অফ ইণ্ডিয়া’ -র জীবনের কিছু অল্পশ্রুত কাহিনীঃ-
১) লতাজী জন্মেছিলেন সুরসাধকের পরিবারে। বাবা দীননাথ মঙ্গেশকার একটি মারাঠি নাট্যদল চালাতেন। লতা সেই পরিবারেই বড় হয়ে ওঠেন সঙ্গীতের প্রতি অপরিসীম ভালোবাসা নিয়ে। চার বোনের তাই লক্ষ্য ছিলো বংশানুক্রমে এই ঐতিহ্যকে আরও সমৃদ্ধ করে তোলা। এই প্রসঙ্গে একটি সাক্ষাৎকারে লতাজী একটা মজার ঘটনা শুনিয়েছিলেন-” একদিন বাবা তাঁর এক শিষ্যকে একটি রাগ বেছে দিয়ে রেওয়াজ করার নির্দেশ দিলেন যাতে এর ফাঁকে তিনি হাতের কাজটুকু সেরে ফেলতে পারেন। আমি ধারেকাছেই খেলছিলাম। হঠাৎ কানে এলো সেই শিষ্য রেওয়াজের মাঝেই একটা মাত্রা গণ্ডগোল করে ফেলেছে। আমি দৌড়ে এসে জায়গাটা সংশোধন করে দিলাম। বাবা যখন ফিরলেন, ততক্ষণে তাঁর নিজের মেয়ের মধ্যেই নূতন শিষ্যর সন্ধান পেয়ে গিয়েছেন। ”
২) লতাজী প্রথম নেপথ্যসঙ্গীত রেকর্ড করেন ১৯৪২ সালে ‘কিতি হাসাল’ নামাঙ্কিত মারাঠী ছবিতে।গানটি ছিলো-” নাচু ইয়া গাড়ে,খেলু সারি মানি হৌস ভরি“। কিন্তু দুঃখজনকভাবে গানটিকে ফাইনাল এডিটিংয়ের সময় বাদ দেওয়া হয়।
৩) লতা মঙ্গেশকার একবার সুরকার নৌশাদের সঙ্গে গান রেকর্ড করতে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে যান। লতাজীর জবানিতেই ঘটনাটা শোনা যাক-” আমরা এক গনগনে গ্রীষ্মের দুপুরে রেকর্ড করছিলাম।আপনারা জানেন মুম্বাইয়ে কি পরিমাণ গরম পড়ে। সেইসময় রেকর্ডিং স্টুডিওতে কোনো এয়ার কণ্ডিশনারের ব্যবস্থাও ছিলো না।আবার ফাইনাল রেকর্ডিংয়ের সময় সিলিং ফ্যানেরও সুইচ অফ করা হয়। ব্যাস, যা হয় আর কি, আমিও অজ্ঞান হয়ে গেলাম। সে এক যা তা কাণ্ড”!!!
৪)লতাজী একবার মন্তব্য করেছিলেন তিনি নিজের গাওয়া গান কোনওদিন শোনেননি।শুনলে নাকি তার মধ্যে হাজারটা ভুল বার করতেন। বোঝো!!
৫) লতাজীর মতে যেসব সঙ্গীত পরিচালকের সাথে তিনি কাজ করেছেন, তাঁদের মধ্যে বিশেষ বন্ধন তৈরী হয়েছিলো মদন মোহন সাহেবের সঙ্গে। তিনি একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন-” মদন মোহনের সাথে আমার একটি বিশেষ সম্পর্ক তৈরী হয়েছিলো যা একজন নেপথ্যশিল্পী ও সঙ্গীত পরিচালকের থেকে অনেক গভীর। সেটি হলো ভাই-বোনের।” ‘জাহান আরা’ ছবির ‘উও চুপ রহে’ গানটি তাঁদের জুটির সেরা কাজ বলে লতাজী উল্লেখ করেছেন।
৬) ১৯৯৯ থেকে ২০০৫ সাল অবধি লতা মঙ্গেশকার সাংসদ ছিলেন। ১৯৯৯ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি তাঁকে রাজ্যসভার সাংসদ হিসাবে মনোনীত করেন। লতাজী মন থেকে এই মনোনয়ন খুব একটা মেনে নিতে পারেননি এবং সংসদে উপস্থিত হতে অনীহা প্রকাশ করেছিলেন।
৭) লতাজী শুধুমাত্র ভারতীয় সঙ্গীত কিংবদন্তী নন। তাঁর সুরেলা কন্ঠের অনুরাগী ছড়িয়ে আছেন সারা বিশ্বজুড়ে। তিনি প্রথম ভারতীয় শিল্পী হিসাবে লণ্ডনের রয়্যাল এলবার্ট হলে অনুষ্ঠান করার সুযোগ পান।ফ্রান্সের সরকার ওই দেশের সর্বোচ্চ অসামরিক খেতাব ” অফিসার অফ দ্য লিজিয়ন অফ অনার” লতাজীকে প্রদান করে ২০০৭ সালে।
৮) গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের ১৯৭৪ সালের সংস্করণে লতাজীকে উল্লেখ করা হয় সর্বাধিক নেপথ্যসঙ্গীত রেকর্ডকারিণী হিসাবে। মহম্মদ রফি এই বিষয়ে চ্যালেঞ্জ জানালে তাঁর নামটিও একইসাথে উল্লেখ করা হয়। ১৯৯১ সালে এই রেকর্ড ভাঙেন আশা ভোঁসলে। ২০১১ সালে থেকে রেকর্ডটি দখলে আছে পুলাপাকা সুশীলার।
৯)অদ্ভুত ব্যাপার,প্রায় ৭৭ বছরের সঙ্গীত জীবনে অজস্র সঙ্গীত পরিচালকের সাথে কাজ করলেও লতাজী ও পি নাইয়ারের সুরে কোনো গান রেকর্ড করেননি।
১০) লতা মঙ্গেশকার ময়ূরেশ পাইয়ের সুরে তাঁর শেষ গানটি রেকর্ড করেন ৩০শে মার্চ,২০১৯ সালে। গানটির প্রথম লাইনটি ছিলো-” সৌগন্ধ মুঝে ইস মিট্টি কি”।এটি ভারতীয় সেনাবাহিনী ও জাতির উদ্দেশ্যে উৎসর্গীকৃত হয়।
তথ্যসূত্র
১) ইণ্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকা।
২) স্টারডাস্ট ম্যাগাজিন
৩) ফার্স্টপোস্ট
৪) বলিউড হাঙ্গামা
৫) তেরে সুর আউর মেরে গীত
Collected from FB